বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্প দেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল এবং সম্ভাবনাময় শিল্প খাত গুলোর মধ্যে অন্যতম।
মার্কেট সাইজঃ
উইকিপিডিয়া এর তথ্য মতে ইলেকট্রনিকস শিল্পের মার্কেট সাইজ ২৬,৭০০ কোটি টাকার মত যা ক্রমাগত ১১% করে বাড়ছে।
ইতিহাস
বাংলাদেশে ১৯৩০ সালে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রাংশের ব্যবহার শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনী তাদের প্রয়োজনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রেডিও স্টেশন, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এবং তারহীন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা শুরু করে এবং এর মাধ্যমেই ব্রিটিশ ভারতে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আধুনিক প্রযুক্তির পরিচয় ঘটে। ১৯৫০ সালে বেসরকারি পর্যায়ে ইলেক্ট্রনিক শিল্পের যাত্রা শুরু হয় এবং শুরুর দিকে কিছু কারখানা সীমিত সংখ্যক রেডিও তৈরি করার মধ্য দিয়ে এই শিল্পে প্রবেশ করে। ষাটের দশকে আরও প্রতিষ্ঠান এতে যুক্ত হয় এবং ১৯৬৪ সালে ঢাকাতে প্রথম টেলিভিশন স্টেশন প্রতিষ্ঠার পর কিছু প্রতিষ্ঠান টেলিভিশন সেট বানানো শুরু করে।[২] ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেমের সাথে মানুষ প্রথম পরিচিত হয় ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৯২ সালে প্রথম মোবাইল ফোন বাজারে আসে। ১৯৮০ সালের আগে ওয়ান-ব্যান্ড রেডিও ব্যতীত অধিকাংশ ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করা হত। তবে ১৯৮০ সালের পরে অনেক কারখানা রেডিও, টেলিভিশন, অডিও-ভিডিও রেকর্ডার ও প্লেয়ার এর বিভিন্ন অংশ জোড়া দেয়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ১৯৯০ সালে উন্নত পণ্য যেমনঃ কম্পিউটার, তারবিহীন টেলিফোন, স্যাটেলাইট টিভি সিগন্যাল গ্রহণকারী সরঞ্জাম ইত্যাদি পণ্য দেশেই বিভিন্ন অংশ জোড়া দেয়া শুরু হয় এবং কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ দেশেই উৎপাদন শুরু হয়। এই সময়ের মাঝে বেশ কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান দেশেই অনেক পন্যের বিভিন্ন অংশ জোড়া দেয়া ও উৎপাদনের কাজ শুরু করে। এতে অনেক স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এসব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগ দিয়ে সমন্বিত হয়ে কাজ শুরু করে। বর্তমানে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ষাটের অধিক। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে কিছু দেশি প্রতিষ্ঠান দেশে তৈরি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্য রফতানি করে আসছে। এদের মাঝে ওয়ালটন অন্যতম।
কন্সিউমার ইলেকট্রনিকস এবং হাদী গ্রুপের অবদান:
বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস শিল্পে হাদী গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হাদী ইলেকট্রনিকস প্রোডাক্টসের অপরিসীম অবদান আছে। প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ এক যুগ ধরে উন্নত মানের ইলেকট্রনিক পণ্য যেমন সিলিং ফ্যান, সুইচ, সকেটস সহ বিভিন্ন কন্সিউমার প্রোডাক্ট উৎপাদন করে আসছে। যা দেশে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশে ইলেকট্রনিকস শিল্পের ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা
বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের চাহিদার ৯০ ভাগেরও বেশি পূরণ করছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। এদের মধ্যে ফ্রিজের প্রায় ৭৫ ভাগ মার্কেট শেয়ার এখন ওয়ালটনের। পাশাপাশি টেলিভিশনের প্রায় ৫০ শতাংশ বাজার এবং এককভারে এসির চাহিদা পূরণেও ওয়ালটন শীর্ষে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপের প্রায় ৪০টি দেশে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য রপ্তানি করছে ওয়ালটন।
বাংলাদেশে তৈরি কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স পণ্যের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, উচ্চ গুণগতমান ও সাশ্রয়ী মূল্য জয় করে নিচ্ছে বিশ্ব ক্রেতাদের আস্থা। ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ইলেকট্রনিক্স পণ্যের নতুন রপ্তানি বাজার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানিতে এসেছে দুর্দান্ত সাফল্য।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানির পরিমান আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে আট গুণ বেড়ে ১২.৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মোট রপ্তানির প্রায় ৬৭.২১ শতাংশ আয় এককভাবে অর্জন করেছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন।